somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার পিচ্চি ! (পর্ব-১) {একটি ছোট (ভালোবাসার !) গল্প}

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং………

ঘন্টা টা অনবরত বেজেই চলেছে। যার অর্থ প্যারেড টাইম। বেল বাজার ১৫ মিনিটের ভিতর প্যারেড শুরু হবে। ঘুমের ভিতরেই প্রায় মাথা খারাপ হয়ে গেল। আমি আজ ডিউটি ক্যাডেট। যার অর্থ কমপক্ষে ২০ জন সিনিয়র ভাইয়ের মেটাল ব্যাজ পলিশ, সু পলিশের ব্যবস্থা আমাকে করা লাগবে। সেগুলো তো দূরে থাক, আমার নিজের সু পলিশই ক…রা হয়নি। তাছাড়া ক্লাস 11 এবং 12 এর সিনিয়রদের ঘুম থেকে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। কিছুই হলোনা…আজ নির্ঘাত আমার কেয়ামত। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে। উঠেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কোথায় আমার কাবার্ড, কোথায় আমারটেবিল ! কিচ্ছু নাই। সামনে শুধুএকটা বাচ্চা ছেলে স্টীলের প্লেট আর চামচ নিয়ে শব্দ করছে আর জিব্বা কামড়ে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। মাথাটা দুদিকে দু’বার সজোরে ঝাকুনি দিতেই সবকিছু পরিস্কার হয়ে গেল।

আমি আসলে আমার বাসায়। গতকালই ভ্যাকেশানে এসেছি। আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পিচ্চি আমার ছোটভাই। হাইব্রিড প্রজাতির বিচ্ছু। ইচ্ছা হলো কানের নিচে দুটা বসিয়ে দেই। কিন্তু ওর কাছেযে অস্ত্র আছে তা আরো ভয়ঙ্কর। তারস্বরে চিৎকার করে “আম্মুউউ…” বলে কেঁদে উঠবে। ব্যাস…আমার কেয়ামত। তাই অনেক কষ্টে রাগটাকে দমন করলাম।

-কি হয়েছে রে?
-পাশের বাসার আন্তি এতেতে…
-আন্তি কি রে? আন্টি বলতে পারিসনা?
-নাআআ…আন্তি এতেতে…তোমাকে দাকে… বলেই একদৌড়ে চলে গেল।
পাশের বাসার কোন আন্টি আবার এসেছেন আল্লাহ মাবুদ জানেন। সকালবেলা বাসায় কোন গেস্ট আমি সহ্য করতে পারিনা। সেটা আমার খাদ্যাভাসের কারনে। ব্রেকফাস্টটা সাধারণত আমি ড্রয়িং রুমে টিভি ছেড়ে দিয়ে মনের সুখে করতে অভ্যস্ত। তাছাড়া ব্রেকফাস্টে আমার খাবারআইটেমের বৈচিত্রতা দেখে সবাই বেশ বাঁকা চোখে তাকায়। নাম না জানা এই আন্টির হঠাৎ আগমনে তাই কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলাম। যদিও এই সময়টাকে ঠিক সকাল বলে চালানো যায় না। প্রায় বারোটা বাজে। কলেজ থেকে বাসায় আসলে এই একটা সমস্যা হয়। বেলা করে ঘুম থেকে ওঠাটাকে নাগরিক অধিকার বলে মনে হয়। কিন্তু কি আর করা…আন্টি আমার নাগরিক অধিকার সম্পর্কে অবগত নন। তাছাড়া বেচারি নাকি ঘন্টা দুয়েক হয়ে গেল এসেছেন। অস্বস্তিকর বিলম্বিত ব্রেকফাস্ট সেরে ড্রয়িংরুমে হাজির হলাম।

যে আন্টিটা বসে আছেন তাকেই সবচেয়ে কম এক্সপেক্ট করেছিলাম।আন্টি তার মেজো মেয়েকে নিয়ে বসেআছেন। বিরক্তি এবং ভয়ের একটা মিশ্র অনুভূতি হল। বিরক্তির কারন এই পরিবারকে আমি দু’চোখে দেখতে পারিনা।আমাদের পাড়ার একমাত্র ছোট মাঠটা এদের বাসার পাশেই। খেলতে গিয়ে এযাবৎকাল যে সকল বল এই বাসার চারদেয়ালের ভিতর ঢুকেছে তারা আর প্রাণ নিয়েফিরে আসেনি। একজন কিশোরের কাছে একটা পরিবারকে বিরক্ত লাগতে এই একটা কারনই যথেষ্ট। আর আমার ভয়ের কারণটা হলো তার মেজো মেয়েরউপস্থিতি। এই মেয়ে ক্লাস সিক্স নাকি সেভেনে যেন পড়ে। একটা উঠতিবয়সের মেয়েকে নিয়ে একজন মায়ের আরেকটা উঠতি বয়সের ছেলের বাসায় চলে আসা, এই ব্যাপারটায় খানিকটাবিচার-শালিসের গন্ধ পাচ্ছিলাম।যদিও আমি নিতান্তই ভদ্র ছেলে। মেয়েঘটিত কোন ব্যাপারে কোনকালেই ছিলাম না।

যা হোক, আমার নিকট তাদের আগমনের কারণ সমূদয় বিস্তারিত জানলাম। সমস্যাটা সংক্ষেপে এরকম যে, এই মেয়ে এ বছর ক্যাডেট কলেজে চান্সপেয়েছে। কলেজে প্রথম টার্ম কাটিয়ে এসেছে। ক্যাডেট কলেজের বিভিন্ন নিয়ম কানুন, কঠিন শিডিউল, পানিশমেন্ট সব দেখে সে ভয়ানকভাবে আতঙ্কিত। সে আর ঐ জাহান্নামে ফিরে যেতে চায় না। মেয়ের বাবা-মা এটা নিয়ে যারপরনাই চিন্তিত। অত্র এলাকায়ক্যাডেট বলতে আর আমিই আছি। আমারউপর দায়িত্ব পড়লো “ক্যাডেট কলেজ অতীব সুখের স্থান” এই ব্যাপারটা মেয়ের মগজে ইন্সটল করে দেয়া । আপাতত আমাকে এই দায়িত্ব হস্তান্তর করে আমাদের মাতাগন পাশের কক্ষে মেয়েলি আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

আমি তখন পড়ি নবম শ্রেনীতে। আর এই মেয়ে সপ্তম শ্রেনী।বলে রাখা ভাল ক্যাডেট কলেজের হিসাবে দুই বছরের ব্যাবধান একটা জেনারেশানব্যাবধানের সমান। তার উপর আবার মেয়ে। আমি ব্যাপকভাবে অস্বস্তিতে পড়ে যাই। কি বলার আছে আমার… “ক্যাডেট কলেজ অতীব সুখের স্থান” এর স্বপক্ষে আমার কোন যুক্তি নেই। সত্যি বলতে এখনো আমার পিঠে সিনিয়র ভাইয়ের ক্রসবেল্ট দিয়ে পিটানোর চিহ্ন আছে। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমিও পানিশমেন্ট ব্যাপারটার পক্ষে। যা হোক, হালকা পাতলা যে লেকচার আমি এই মেয়েকে দিলাম তারশিরোনাম দিলে দাঁড়াবে “ক্যাডেটকলেজ জীবনে পানিশমেন্টের উপকারিতা এবং জুনিয়র সাইজ করার ১০১ টি অব্যার্থ উপায়”।

এই মেয়ে কি বুঝেছিল জানিনা। কিন্তু সে কলেজে ফিরে গিয়েছিল এবং শুনেছি পরবর্তীতে সিনিয়র হবার পর জুনিয়র মহলে সে ছিল মূর্তমান আতঙ্ক। আতঙ্কময়ী এই মেয়ের নাম অন্তি। আমার পরবর্তী জীবনটা অন্তি নামক এই কাঠিন্য এবং মায়ার অদ্ভূত সংমিশ্রনে গড়া মেয়েটাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।

২.

ক্যাডেট কলেজে ক্লাস সেভেন জীবনের মূল যে চ্যালেঞ্জ সেটা হলো “ডাইনিং হল ম্যানারস”। কলেজের প্রথম রাতটাই শুরু হয় ফর্ক এবং স্পুনের কঠিন ধ্বস্তাধ্বস্তি সংঘর্ষ করে খাওয়া দাওয়া শেখার মধ্য দিয়ে। দিন যত যায়, নিয়ম কানুন ততই বাড়তে থাকে। ক্লাস সেভেনে পানিশমেন্টের আশি ভাগ কারনগুলোহয় ডাইনিং হল সংক্রান্ত। ক্লাস এইটে উঠলে এই নিয়মগুলো কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। কিন্তু ক্লাস এইট জীবন ক্যাডেট কলেজের ছ’বছর জীবনকালের সবচেয়ে কঠিন বছর। এই সময় নিজের ভুলের জন্য তো অবশ্যই, জুনিয়রদের ভুলের জন্যও পানিশমেন্ট খেতে হয়। ক্লাস সেভেনের উপর কলেজ কর্তৃপক্ষের কিছুটা সহানুভূতি থাকে, ক্লাস এইটের উপর সেটাও থাকে না। সবমিলিয়ে ক্লাস এইটের একজন ক্যাডেটের সাথে রবীন্দ্রনাথের “ছুটি” গল্পের ফটিকের বৈশিষ্ট সম্পূর্ন মিলে যায়। এ সময় একজন ক্যাডেট “ক্লাস সেভেন” নামক ছোট বাচ্চার তকমাটাও হারায় আবার “ সিনিয়রিটি” নামক যা ইচ্ছা তাই করার গ্রীনকার্ডটাও পায় না। তারা থাকে সবার চক্ষুশূল। আর নবম শ্রেনী জীবন সবচেয়ে টেনশানমুক্ত। এই বছর পার হয়ে যায় চৌর্য্যবৃত্তি শিখতে। কলেজের আম,জাম,কাঁঠাল চুরি করা, স্যারকে নিকনেম দেওয়া, স্টাফদের দাবড়ানি খাওয়া এসবের মধ্য দিয়ে। (চলবে....)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×